ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগঃ ক্লাব গুলোর হিসাব মেলেনা

ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ২০২১-২২ মৌসুম এর পর্দা নামলো প্রায় এক সপ্তাহ আগে। ঘরোয়া মৌসুম শেষ হয়েছে আরো আগে। এখন সময় খতিয়ানের, কত গেলো, কত এলো তা জানার। রূপালী রং এর বড় হাতলের ট্রফির সাথে কত টাকা ক্লাব গুলোতে প্রফিট হিসেবে যুক্ত হচ্ছে তা এখন ভাবার বিষয়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, রিয়াল মাদ্রিদ এর ট্যাঁকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ে যুক্ত হলো ১৩২.৪৮ মিলিয়ন ইউরো। সাথে লা লীগা জয়ে পেলো ১৫৪ মিলিয়ন ইউরো। দুয়ে মিলে হলো ২৮৬ মিলিয়ন ইউরো। যদি ইউয়েফা সুপার কাপ জিতে যায় তাহলে আরো ৫ মিলিয়ন বাড়বে হয়তো। এই সিজনেই মাদ্রিদ শুধু খেলোয়াড়দের বেতনেই খরচ করেছে ৩২৬ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। শুধু বেতনের দিকে খেয়াল করলেই এত কষ্ট করে অর্জন করা দুইটা ট্রফি মিলিয়েও লাভ তো নয় উল্টো লসের খাতায় যোগ করলো ৪০ মিলিয়ন ইউরো।

হ্যাঁ। এই খতিয়ান পুরো হিসাবের শুধুই একটি অংশ মাত্র। আয়ের আরো অনেক উৎস যেমন আছে, ব্যয়ের ও আরো অনেক উৎস রয়ে গেছে।
কিন্তু, এই হিসাব হয়তো দেখিয়ে দিচ্ছে ইউয়েফা আসলে কীভাবে শুষে নিচ্ছে মোটা অর্থের বান্ডিল। ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ১২৫ টি মূল পর্বের ম্যাচ। যেখানে গ্রুপ পর্যায়ে সর্বনিম্ন টিকেটের দাম ৫০ ইউরো এবং ফাইনালে যা ১০০ ইউরো পর্যন্ত ছোঁয়। এটা শুধুই চ্যাম্পিয়ন্স লীগের হিসাব। এর বাইরে আছে ইউরোপা লীগ এবং কনফারেন্স লীগ। পাঠক! অর্থের ঝনঝনানিটা টের পাচ্ছেন?

নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারে (পড়ুন আরব শেখদের ক্লাব গুলোর দৌরাত্ম্যে) ফ্রিতে বা নাম মাত্র মূল্যে বাগিয়ে আনার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা অনায়াসেই হয়ে যাচ্ছে এমন নয়। সেটা হচ্ছে মোটা বেতনের লোভ দেখিয়ে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মাদ্রিদ এর মতো অভিজাত ক্লাব গুলোকেও এখন বেতন বাড়াতে হচ্ছে, ফ্রিতে প্লেয়ার আনার চিন্তা করতে হচ্ছে। এই ফ্রিতে আসা প্লেয়ারদের সাথে দরকষাকষির সুযোগ থাকে কম। ফলে তাঁদেরকে দিতে হয় মোটা বেতন এবং দলের বাকিদের বেতন তাঁদের সাথে সামঞ্জস্যতা আনতে পুরো স্কোয়াডের বেতনই বৃদ্ধি পায়। যদিও বেল, ইস্কো, মার্সেলোর প্রস্থানে মোট বেতনের প্রায় ২১% মুক্ত হয়ে গেলো তথাপি রুডিগারের আগমন ও দলের অন্যান্য স্থান পূরণে নিশ্চিতভাবেই এর বড় একটা অংশ ব্যবহার হয়ে যাবে।

এহেন অবস্থায় খেলার বাইরেও অন্যদিক হতে আয়ের উৎস বাড়াতে কেন দল গুলো মরিয়া হবেনা? ইউরোপের প্রায় দলই এখন তাঁদের স্টেডিয়ামের নাম বিক্রি করছে, ভাড়া দিচ্ছে এমনকি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করতে বা স্টেডিয়াম এর উন্নয়নে উঠেপড়ে লাগছে। খেলোয়াড়রাও বা কেন কম বেতনে এক সিজনের চ্যাম্পিয়ন হবার সম্মান পেতে মরিয়া হবে যেখানে মোটা বেতনের নিশ্চয়তা তাঁকে ৪০ পরবর্তী জীবনে কোচিং নামক চাপ বা কমেন্ট্রি নামক তেলবাজি হতে মুক্ত রাখবে?
এমতাবস্থায়, ভবিষ্যতে মাদ্রিদের মতো দল গুলোর কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ট্রফি সম্মানের হলেও ব্যক্তি-মালিকানার ক্লাব গুলোর কাছে তা স্রেফ শো-পিস হবে না তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়?

ছুটি গল্পের ফটিকের সেই ‘এক বাঁও মেলে না, দুই বাঁও মেলেএএএ না’-এর মতো সোশিও বা জনগণের ক্লাব গুলোর হিসাবও আগামী অনেক বছর মেলবেনা তা বলে দেয়াই যায়।

সোর্সঃ ক্যাপলজি ডট কম, স্পোর্টসআনফোল্ড ডট কম ও এএস ডট কম।

You May Also Like