এনফিল্ড জয়ের সৌরভ

গতবছর যখন রিয়াল মাদ্রিদ একের পর এক মিরাকল ঘটিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপার পথে এগিয়ে যাচ্ছে, কোন এক ম্যাচের পরদিন লেখার শুরুতে বলেছিলাম- এই ধরনের ম্যাচের ঠিক পরপরই কিছু লেখা যায় না ম্যাচ নিয়ে। বিশ্লেষকের আগে নিজেও দর্শক এই কারনেই কী না যখন আপনার দল পাহাড় ঠেলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে জিতে যাবে- আপনার রক্তে নাচন উঠবে, যুক্তি জানালা দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য পালিয়ে যাবে, বিশ্লেষনী ক্ষমতার আগে মনের দখল নিয়ে নেবে জিতে যাবার উত্তাল আনন্দ! 

 

বিশ্বকাপের তিন চার সপ্তাহ আগে থেকেই রিয়াল মাদ্রিদ দল হিসাবে একটু ছন্নছাড়া হয়ে ছিল এটা খালি চোখেই দেখা যাচ্ছিল। বিশ্বকাপের পর সেই ছন্নছাড়া ভাবের সাথে যোগ হয়েছিল ক্লান্তি। ব্রাজিল, ফ্রান্স আর স্পেন তিন দলের খেলোয়াড়ের আধিক্য যে দলে, যে দলের মিডফিল্ড জেনারেল খেলে এসেছেন বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী অব্দি- বিশ্বকাপে নিজ নিজ দলের ভিন্ন ধরনের হতাশাজনক ফল বা লম্বা ম্যাচ খেলার ক্লান্তি সেই দলে অবসাদ আনারই কথা। এই অবসাদের রেশ না কাটতেই সুপারকাপের ফাইনালে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং। লা লীগাতে ৮ থেকে ১১ আবার ১১ থেকে ৮ এরকম একটা ব্যবধান নিয়ে খেলছে সেদিনের প্রতিপক্ষ বার্সেলোনা। এর মধ্যে ক্লাব বিশ্বকাপটাকে মনে হচ্ছিল একটা ঘোড়ারোগের মত।

কিন্তু সেই ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে আসাটাই মনে হচ্ছে এই দলের চাবিতে দম দিয়ে ফেলল। লা লীগাতে শেষ দুই ম্যাচে কিছুটা গোছানো ফুটবল তার ই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। লিভারপুলের জন্য এই মৌসুমটা যাচ্ছে আরো বেশি খারাপ। ইনজুরী আর ফর্মের লুকোচুরিতে এই দলের শিরোপার আশাটাই টিকে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের মধ্যে। তারাও শেষ দুই ম্যাচ জেতায় ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে “ফিরছে লিভারপুল” এই আশাবাদটা ছিলই। দুই দলের জন্য ইঞ্জিন পুরো চালু করতে দরকার ছিল এই ম্যাচে জয় ই।

 

এখানেই ম্যাচটা দুইভাগে ভাগ হয়ে যেতে পারে। প্রথম ২০ আর পরের ৭০। ২০ মিনিট যদি হয় লিভারপুলের নতুন পাওয়া মোমেন্টামের শো, তাহলে বাকি ৭০ মিনিট ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের নিখাদ টেকনিকাল, ট্যাকটিকাল এবং গুণগত মানের হাতে কলমে প্রদর্শনী। আপনি যদি ইংরেজিভাষী কোন সংবাদমাধ্যম অনুসরণ করেন, জেমি ক্যারাঘারের মত কিছু সীমিত দৃষ্টির বিশ্লেষন হয়তো শুনে ফেলেছেন। সেখানে বারবার বলা হচ্ছে- এলিসন বেকার ভুল করেছেন, জো গোমেজ খারাপ একটি ম্যাচ কাটিয়েছেন, কিংবা মৌসুম জুড়ে ইনজুরি জর্জর লিভারপুলের ডিফেন্স।

ক্লাব হিসাবে লিভারপুলের বয়স ১৩১ বছর। এই সুবিশাল ইতিহাসে কোনদিন লিভারপুল ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার হিসাবে ঘরের মাঠে চার গোল খায়নি। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সফলতম দল তাদের ঘরের মাঠে তাদের জালে ৫ বার বল পাঠিয়েছে। সেটাও দুই গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থা থেকে এবং মাত্র ৪৩ মিনিটের ফুটবল খেলার মধ্যেই। এখানে কোন মিরাকল নেই। এখানে কোন আচমকা ঘটে যাওয়া ঘটনা নেই বা প্রতিপক্ষের ঢিলেমিকে কৃতিত্ব যদি দিতেই চান, রিয়াল মাদ্রিদের দূর্দমনীয় ফুটবল থেকে একরত্তি কৃতিত্ব ছিনিয়ে নেবার কোন উপায় নেই। ম্যাচটাকে রিয়াল মাদ্রিদের দৃষ্টিকোণ থেকে কীভাবে দেখতে পারি আমরা?

Real Madrid's starting line-up against Espanyol | Real Madrid CF

বেনজেমা-ভিনি-ভালভার্দের কাছেই বারে বারে নিষ্ক্রিয় হচ্ছে লিভারপুলের ডিফেন্সিভ সিস্টেম। Photo: Real Madrid Official Website

 

প্রথমে আসি ট্যাকটিকাল দিকে। কার্লো আনচেলত্তির ব্যাপারে ইংলিশ মিডিয়া একটা কথা বারবার বলে। সেটা হচ্ছে- কার্লো ট্যাকটিকালি অনেক গূঢ় তত্ত্ব দেয়া কোচের চেয়ে পিছিয়ে। তিনি সেরা ম্যানেজারের কাতারে পড়েন শুধুই তার খেলোয়াড় ম্যানেজমেন্টের কারিশমায়। ইয়ুর্গেন ক্লপের বিপক্ষে আনচেলত্তির এই মাস্টারক্লাস সম্ভবত এটার উত্তর দেবার জন্য খুবই ভাল একটি উদাহরণ। আনচেলত্তি কি কি ভাল করেছেন তার একটি তালিকা দেয়া যাক।

১। মাঝমাঠে লিভারপুলের তুলনামূলক ধীর মিডফিল্ডকে বারবার গতি পরিবর্তনের ফাঁদে ফেলা।

২। বার বার গোমেজকে টার্গেট করে ভ্যান ডাইককে তার জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা।

৩। কার্ভাহাল-নাচোকে তিনটা আলাদাভাবে ব্যবহার করে আলেকজান্ডার আর্নলড আর রবার্টসনের উইং ওভারলোডকে একরকম বোতলবন্দী করে ফেলা।

তরুণ খেলোয়াড়দের একদমই না নামানো আর ৫ নাম্বার সাবস্টিটিউট ব্যবহার করাকে বাদ দিলে কার্লো আনচেলত্তির কাছ থেকে বাকি জিনিসটা ক্লপ, টুখেল কিংবা অন্য যে কোন ইউরোপিয়ান কোচ একটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে নিতে পারেন যার হেডলাইন হবে “অতি আক্রমণাত্বক দলের বিপক্ষে আদর্শ ট্যাকটিক্স”। সিস্টেম হেভি কোচদের ধ্বংস করে ফেলার নজির কার্লোর জন্য অবশ্যই এটা প্রথম নয়। গার্দিওলা কিংবা ক্লপকে এর আগেও নাজেহাল করার নজির আছে তার বহুবার। এর কারণ এটাই যে কার্লো আনচেলত্তির কোন বাধাধরা দল দর্শন নেই। যিনি ওষুধ নিয়ে কাজ করেন তাকে হয়তো রোগ আকড়ে ধরে বাঁচতে হয়না।

 

এবার আসি এই পাজলের দ্বিতীয় ভাগে। কার্লো আনচেলত্তি এই ট্যাকটিকাল প্রদর্শন কি তার নাপোলি কিংবা এভারটন দলটা নিয়ে করতে পারতেন? উত্তর হচ্ছে- “না”। ক্লপ কিংবা ক্লপের পরবর্তী গেগেনপ্রেসিং ঘরাণার বিবর্তনকারী টুখেল- দুইজনই নিজের সিস্টেম নিয়ে প্রায় আপোষহীন। সিস্টেমের কাছে খেলোয়াড়েরা বলি হয়ে যান খুব সহজেই। কার্লো আনচেলত্তি সেখানে তার কাজই শুরু করেন “হাতে কি আছে, সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহারটা কীভাবে সম্ভব?” এখান থেকে। খেলোয়াড় তাই যত ভাল- আনচেলত্তি তত ভাল কোচ। খেলোয়াড়দের সামর্থ্যে এখানে সিস্টেম পরিবর্তিত হয়, সিস্টেমের পূনর্জন্ম হয় প্রতি মৌসুমে, অনেক সময় একই মৌসুমে একাধিকবার। এই প্রক্রিয়াতেই কখনো এঙ্গেল ডি মারিয়া সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে, ফেদে ভালভার্দে রাইট উইং পজিশানে কিংবা রড্রিগো গো’স রা এটাকিং মিডফিল্ডে নতুন করে নিজেদের ধরতে পারেন। কিন্তু এই বিষয়গুলো কাজ করতে শর্ত একটাই- টেকনিকাল পারফেকশান। রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ড এবং আক্রমণে প্রতিপক্ষকে রীতিমত নাজেহাল করেছে বারেবারে। এরও তিনটা উদাহরণ দিয়ে দিই।

১। ম্যাচের ২০ মিনিটে ভিনিসিয়াস যখন প্রথম গোলে শট নেন সেটা বেশ কঠিন কোণ ছিল গোল থেকে। তাকে অনেক সমালোচনায় বিদ্ধ গোমেজের সাথে মার্ক করছিলেন ফ্যাবিনহো আর আলেক্সান্ডার আর্নর্ল্ড ও। কিন্তু এখানে মানের পার্থক্য এতটাই বেশি যে এদের সাথে এলিসনের মত গোলকীপারের বাধাও ভিনিকে আটকাতে যথেষ্ট ছিল না।

২। ম্যাচের ৪৫ মিনিটেই আসলে রিয়াল মাদ্রিদ সমতাসূচক গোলটা করে ফেলতে পারত। রড্রিগো শেষ মুহুর্তে রবার্টসনের ট্যাকলের শিকার হয়ে যান। কিন্তু এই আক্রমণের বিল্ড আপ শুরু হয়েছিল কোর্তোয়ার থ্রো থেকে। যেটার শেষে ভিনিসিয়াস বল বাড়িয়েছিলেন রড্রিগোকে। কিন্তু এর মাঝে ছিলেন ফেদে ভালভার্দে এবং সেটা বাম টাচলাইন বরবার! ফেদে ভালভার্দে ২৩ থেকে ৪৩ এই ২০ মিনিটের মাঝে key pass বাড়িয়েছেন চারটি। প্রতিটি আবার মাঠের পুরোপুরি ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে। লিভারপুলের মিডফিল্ডের কারো গোটা ম্যাচেই তিনটা key pass নেই। 

৩। এরপর অবশ্যই পঞ্চম গোল। এখানে মদ্রিচের গতি, ভিনিসিয়াসের বল ছাড়ার পরিমিতিবোধ এবং বেনজেমার প্রথম এবং দ্বিতীয় টাচ- সবগুলোই মানের বিচারে ইউরোপের সেরা দলের মুকুট পড়ে থাকা দলের মানের statement.

 

এই ছোট ছোট মুহুর্তগুলোই আপনাকে বড় ম্যাচে এগিয়ে দেবে। এই মুহুর্তগুলোই যোগ হয়ে হয়ে আপনাকে দেবে ৫ গোল করা দলের superiority. 

শেষে মানে তৃতীয় ভাগে আসতে হবে গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে। মানসিক শক্তি। ম্যাচের ২০ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদ আর ম্যাচের ৪৭ মিনিটে লিভারপুল দুই দলের শারীরিক ভাষার দিকে যদি তাকান তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কেন ম্যাচের ফলাফল ৫-২। প্রথম ক্ষেত্রে রিয়াল মাদ্রিদ ছিল ২ গোলে পিছিয়ে পড়া দল। তাদের গোলরক্ষক মাত্র একটা গোল উপহার দিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু সেই দলের ২২ বছর বয়সী তরুণ আর ৩৫ আর ৩৭ বছর বয়সী দুই সিনিয়র মিলে বাকিদের বলছেন শান্ত থাকতে। প্রথম গোলের পর সেই ২২ বছর বয়সী তরুণ উদগ্র হায়েনার মত প্রেস করছেন প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে! রিয়াল মাদ্রিদ যদি টেকনিকালি আর ট্যাকটিকালি এই ম্যাচে এগিয়ে নাও থাকত- শুধু মানসিকভাবে এই দানবীয় উপস্থিতিই যথেষ্ট একটা দলকে একের পর এক মিরাকলের জন্মদাতা বানিয়ে ফেলতে।

 


৪৭ থেকে ৭০ এই সময়টাতে ৩-২ গোলে পিছিয়ে পড়া লিভারপুল সেখানে দেখিয়েছে ভয় কীভাবে যে কোন দলকে অর্ধেক করে ফেলতে পারে সামর্থ্যে আর বিবেচনায়। ৭০ মিনিটের পর রিয়াল মাদ্রিদ প্রায় খেলায় জোর দেয়া থামানোর পর তারা ম্যাচে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত এসেছে ঠিকই। কিন্তু ততক্ষনে এনফিল্ডের গ্যালারিতে লাল অংশের পিনপতন নীরবতা ভেদ করে শুধুই শোনা যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের “ওলে! ওলে! ওলে!” ধ্বনি। সেটার ফাঁকে ফাঁকে কখনো বাজছে “Asi ! Asi ! así gana el Madrid!” কিংবা লুকা মদ্রিচের মাঠ থেকে উঠে যাবার সময় সম্মিলিত করতালি।

 

এইসব ম্যাচ দলের ভুল বের করার ম্যাচ নয়। তবুও যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, বলা যেতে পারে সুযোগ ছিল আরো একটা গোল করে ম্যাচটাকে ধরাছোয়ার বাইরে নিয়ে যাবার। লিভারপুলের গোলদু’টির মধ্যে প্রথমটাতে কামাভিঙ্গা হয়তো আরেকটু দ্রুত রিয়াক্টিভ হতে পারতেন। কিংবা শেষ ১০ মিনিটে সেবায়োস আসেন্সিওর সাথে টনি ক্রুসকে না নামিয়ে আরেকটু ক্ষুধার্ত কোন তরুণকে নামিয়ে দিলে একটা গোল বেশি হয়ে যেতেই পারত। কিংবা হ্যাটট্রিকটা ভিনিসিয়াস বা বেনজেমা করতে আরেকটু চেষ্টা করতেই পারতেন শেষ ১০ মিনিট পাস প্র্যাকটিস আর ওলে ওলের লোভটা সামলিয়ে।

কিন্তু, মৌসুমের এই পর্যায়ে ইনজুরি কাটিয়ে বেনজেমা ফিরতে শুরু করেছেন নিজের চেহারায়, মানসিকভাবে ভিনিসিয়াস জয় করতে শুরু করেছেন তার সামনের চ্যালেঞ্জগুলিকে, কামাভিঙ্গা কাটিয়ে উঠছেন তার অনিশ্চিত ভাবটা। সর্বোপরি ক্রুসের হুট করে স্কোয়াডে ফেরা, লেফটব্যাক হিসাবে নাচোকেও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসাবে ব্যবহার করতে পারা কিংবা রুডিগার, কার্ভাহাল হয়ে মিলিতাও এর প্রায় পুরো গেমেই উন্নতি- এতগুলো ভাল জিনিস ও ব্যাগে ভরে বার্নাব্যুতে নিয়ে যাবার ব্যাপারটা উপভোগ না করে উপায় নেই।

 

হয়তো মৌসুমে ধুকতে থাকা প্রিমিয়ার লীগের দলকে হারানো অত বড় বার্তা দেয়না যতটা আমরা ভাবছি। হয়তো ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবার দেখা হওয়ার পরই লিভারপুলকে হতাশ করা দল হিসাবে এটা হওয়া উচিত আমাদের নিয়মিত খেলাই। হয়তো ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার আগেই এই দানবীয় চেহারাটা দেখাতে পারা উচিত ছিল আমাদের।

কিন্তু সব শেষে আপাতত মাথায় গেঁথে রাখুন- গত মৌসুমে যে কাজটা ৯০ মিনিট খেলে আসার পর শুরু হত আমরা সেটা ২০ মিনিট যেতেই হয়তো শুরু করতে পারছি। আমাদের বুড়ো দলটা তাদের সাইকেলের শেষ প্রান্তে এসেও উন্নতি করছে। তরুণ খেলোয়াড়েরা জড় করছেন mentality monster হয়ে ওঠার সবটুকু রসদ। আর শেষে? শেষে ইউরোপের অন্যতম কঠিন পরিবেশের জন্য বিখ্যাত এনফিল্ডে পতপত করে উড়ছে রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের পতাকা। 

 

প্রশ্নটা এখন এটাই, আবারো একবার, হবে কী? 

____________________________________________________

২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
আসিফ হাসান জিসান
মাদ্রিদ বেতার সম্পাদক ডেস্ক
টুসান, এরিজোনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

You May Also Like