সাবেক বার্সা ও বর্তমান ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা ও বর্তমান বার্সেলোনা কোচ জাভি প্রেস- পজেশন ফুটবলের চরম ভক্ত ৷ যদিও পেপ গার্দিওলার মত পজেশন ফুটবলের ট্যাকটিসের মত সমৃদ্ধ নয় এখনো জাভির পজেশন ফুটবল ট্যাকটিস ৷
লা ডেসিমাতে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে যে ট্যাকটিসে ব্যাবহার কার্লোর মাদ্রিদ জয় নিয়ে আসে একই ট্যাকটিসে জাভির বার্সেলোনাকে হারাতে ব্যবহার করেন কার্লো৷ পজেশন ফুটবলে মাদ্রিদ এমনিতে সার্ভাইব করে এজন্যই কার্লোর মাদ্রিদ কাউন্টার অ্যাটাকে খেলে৷
জাভি ও পেপ দুজনই প্রেস পজেশন ফুটবলে তাদের টিমকে খেলান৷ বল পজেশনে রেখে প্রতিপক্ষকে প্রেসিং করে বাধ্য করা , প্রতিপক্ষের প্রেসিংয়ের সময় প্রতিপক্ষের অর্ধে যে গ্যাপগুলো তৈরি হয় এবং হাই লাইন ডিফেন্স তৈরি হয় সেটাকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচ বের করা৷ আবার যখন বল হারায় কুইক প্রেস করে আবার বল নিজেদের পজেশনে নিয়ে আসেন৷ কিন্তু পেপ ও জাভি দু’জনই কার্লোর মাদ্রিদের কাছে নিজেদের পজেশন ট্যাকটিসে পরাজিত হয়েছে৷
এপ্রিল ২০১৪তে পেপের বায়ার্নকে উভয় লেগেই কার্লোর কাউন্টার অ্যাটাকের কাছে পরাস্থ হতে হয়৷ ফলে সেমি থেকেই বিদায় নেয় বায়ার্ন৷
২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদের কাউন্টার এটাকের মহড়ায় আলিয়াঞ্জ এরিনাতে বিপর্যস্ত হয় পেপ গার্দিওলার বায়ার্ন (ছবিঃ Getty images)
মিউনিখে ৪-০ তে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচে জাভি এলেন্সো ও মদ্রিচকে কোয়ার্টার -ব্যাক (QC) হিসেবে খেলান অন দ্যা ফিল্ডে অফ দ্যা বলে ৷ অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, গ্যারেথ বেল, করিম বেনজেমা এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এরা সবাই ফ্রি পজিশন হয়ে ছিলো মাঠে কারণ পেপ ভেবেছিলো তার পজেশন ফুটবলের বিপক্ষে মাদ্রিদ প্রেসিং করবে আর তাদের অর্ধে নিয়ে আসবে তখন যে গ্যাপ গুলো তৈরি হবে যেগুলো কাজে লাগিয়ে ম্যাচ বের করে ফেলবে ৷ মূলত কার্লো এখানেই নিজের দক্ষতার পরিচয় দেয়৷ ওদের বল পজিশনকে পাত্তা না দিয়ে মিড থেকে প্লেয়ার ড্রপ করে কোয়ার্টার-ব্যাকে নিয়ে এসে কাউন্টার ট্যাকটিস সাজান৷ কারণ বল পজেশন নিয়ে খেলুক আর প্রেসিং করে খেলুক বল পায়ে গোল দেওয়ার জন্য প্রতিপক্ষের অর্ধে আপনাকে উঠতেই হবে৷ এই সময়টাতেই কার্লোর প্লেয়াররা ফ্রী হয়ে যান৷ যেহেতু মাদ্রিদ প্রেস করছে না তাই পজিশন গ্যাপও তৈরি হচ্ছে না তখন বল পজিশন নিয়েও পেপ ও জাভির ততকালীন বায়ার্ন ও বর্তমান বার্সেলোনার ডিফেন্সকে হাই লাইন মেন্টেইন করতে বাধ্য হন৷ কাউন্টার অ্যাটাক আপনি এক্সিকিউট করতে পারবেন হাই লাইন ডিফেন্সের বিপক্ষেই৷ বল উইন করা মাত্র মিড ফিল্ড থেকে বল সাপ্লাই করে ওয়াইড এরিয়ায় বল পাঠানোর পর যখন জাভির কিংবা পেপের প্লেয়ারা বল পজিশন নিয়ে উপরে উঠেছেন সেটার সুযোগ নিয়ে মাদ্রিদের অ্যাটাকাররা ফ্রি স্পেসে রান নিয়ে গোল বের করেছে৷
পেপ গার্দিওয়াল ম্যাটা হেরে বেশ সামালোচিত হন ৷ কারণ এর আগের দিনই তিনি সংবাদ সম্মেলন বলেছিলেন “রিয়াল মাদ্রিদ একটি খুব শক্তিশালী দল, এবং পাল্টা আক্রমণে অন্যতম সেরা দল।” তিনি জানা সত্ত্বেও মাদ্রিদের কাউন্টার অ্যাটাক থামানোর জন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করতে পারেন নি৷
একই ভুলে জাভিও হেরেছেন কার্লোর কাউন্টার অ্যাটাকের বিপক্ষে ৷ বল পজিশনে খেলতে দিয়ে মাদ্রিদ প্রেসিং না করে উল্টো তাদেরকে মাদ্রিদের বক্সে আনতে বাধ্য করেছিলো৷ কার্লোর এই কাউন্টার ঠেকানোর জন্য জাভিও কিছুই করতে পারেননি পেপের মতই৷ এখন অনেকে বলতে পারেন জাভির বার্সেলোনা তো দুইটা গোল বের করে নিয়েছে৷ মূলত দুইটা গোল এসেছে মিলিতাওর ভুল থেকে৷ একটা ক্লিয়ার করতে গিয়ে আরেকটা হেডিং টাইমিং জাজমেন্ট ভুল করে৷ তাছাড়া আলাবা না থাকায় আর প্রথম ভুলের পর অনেকটাই ভড়কে গিয়েছে৷ ডিফেন্স স্যাকি থাকায় সুযোগ পেয়েছে৷
কার্লো আনচেলত্তির প্রতি আক্রমণ ট্যাকটিক্সের ব্যখ্যা মিলবে তাঁর Quiet Leadership বইটিতে (ছবিঃ goal.com)
আনচেলোত্তি যেখানেই গেছেন তার কাউন্টার অ্যাটাকিং ট্যাকটিস ব্যাবহার করেছে৷ কার্লো তার লেখা বইতেও বলেছেন ” we speak out the counter attack as an organized tactic ”
কার্লোর অ্যাটাকিং স্ট্রাটেজি :
* পিচে যখন প্রতিপক্ষ আক্রমণে থাকে ওয়াইড এরিয়ার সুযোগটা নেওয়া৷
* একজন বল নিয়ে ওভারলোপিং করে উপরে উঠতে থাকা৷
* ফরওয়ার্ডদের সাথে একজন ডিফেন্স লাইনের প্লেয়ার উপরে উঠতে থাকবে৷ সব কিছুই নির্ভর করে টাইমিং ও শার্প পাসের উপর৷
* ডিপ পজিশনে বলের বিপরীত পাশে প্লেয়ার রাখা৷
কাউন্টার অ্যাটাক কার্লোকে আলাদা মানসিক প্রশান্তি দেয় এজন্য তিনি এটা ব্যাবহার করেন ৷ আপনি ম্যাচ হারতেই পারেন কিন্তু আপনি আপনার ট্যাকটিস মাঠে যতটা বেশি আপনার প্লেয়ারদের দিয়ে বাস্তবায়ন করাতে পারবেন ততই আপনার ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে৷ আপনি যেই ট্যাকটিসে খেলুন প্রতিপক্ষ যখন বল পাবে সেটা প্রতিহত করার জন্য আলাদা ডিফেন্ডিং প্ল্যান রাখতে হবে না হয় ভাগ্য ছাড়া ম্যাচ জেতা সম্ভব নয় নকআউট ম্যাচে৷