প্রতিপক্ষ বিশ্লেষণঃ বার্সেলোনা

পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচ আবারো চলে এসেছে আমাদের সামনে। বাংলাদেশ সময় ২৪ তারিখ রাত ৮ টায় মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা। শতবছরের এই পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আজ রাতে সংযোজিত হতে যাচ্ছে নতুন আরেকটি পৃষ্ঠা। এই পৃষ্ঠায় থাকছে না পুরনো অনেক নাম। এর ভেতরে সবচেয়ে বড় কয়েকটি নাম সার্জিও রামোস, মেসি এবং রাফায়েল ভারান। এল ক্লাসিকো তার গত দশকের অনেক পুরনো তারকাদের হারালেও এখনো ম্যাচটি ইউরোপ এবং সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বড় ম্যাচ হিসেবেই রয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা দুইদলই হয়তো এখনো পর্যন্ত গত গ্রীষ্মে হারানো তারকাদের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে বার্সেলোনা অনেক বেশি ধুঁকেছে বলতেই হবে রিয়াল মাদ্রিদের থেকে। কিন্তু ইতিপূর্বেও আমরা দেখেছি বার্সেলোনা কিংবা রিয়াল মাদ্রিদের শুধু একটি এলো ক্লাসিকো জয়ই লাগে মৌসুমের আগের সব গ্লানি ঝেরে ফেলার জন্য। এই ম্যাচের আগে রিয়াল মাদ্রিদের ভুললে চলবে না যে বার্সেলোনা তাদের সবচেয়ে বড় তারকাকে হারানোর পরও স্পেনের তৃতীয় শক্তিশালী স্কোয়াডের অধিকারী। রিয়াল মাদ্রিদের সামনে এখন অনেকবছর পর টানা ৪ টি ক্লাসিকো জেতার হাতছানি অপেক্ষা করছে।

ম্যাচ পূর্ববর্তী অবস্থা:
বার্সেলোনা যে এই ম্যাচের আগে খুব একটা ভালো অবস্থানে আছে সেটি বলা যাবে না। তবে মৌসুমের শুরুর ধাক্কাটা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। বার্সেলোনা লা লীগায় খুব একটি সুবিধাজনক অবস্থানে নেই বর্তমানে। তারা ৮ ম্যাচ শেষে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ৮ নম্বরে অবস্থান করছে।
তবে আজ রাতে একটি জয় তাদেরকে আমাদের থেকে টেবিলে উপরে উঠিয়ে দেবে। কারণ আমরা সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে মাত্র ২ পয়েন্ট এগিয়ে তাদের থেকে।

ইনজুরি তালিকাঃ
আনসু ফাতি ইনজুরি থেকে ফেরার পর একটু হলেও ড্রেসিং রুম এবং ক্যাম্প ন্যু এর পরিবেশ পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনটি গত সপ্তাহের দুই ম্যাচ ভ্যালেন্সিয়া এবং ডীনেমোর দুটি ম্যাচের পরিবেশেই লক্ষণীয়। ডীনেমোর সাথে ফাতি বেঞ্চে ছিলেন এবং ক্যাম্প ন্যুতে মনে হয়েছে অনেকটাই ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছিলো। কিন্তু ভালেন্সিয়ার সাথে তারা লীড পাওয়ার পর থেকে অনেকটাই পুনরুজ্জীবিত মনে হচ্ছিল ক্যাম্প ন্যু’কে। কিন্তু বার্সেলোনার ইনজুরি ধাক্কা এই মৌসুমে ভালোভাবেই এখনো লেগে আছে। তাদের দলের হয়ে গত মৌসুমে ম্যারাথন দৌড় দেয়া পেদ্রি এবার এই মৌসুমে ইনজুরির সাথে লড়ছেন। রিয়াল মাদ্রিদের সাথেও ম্যাচটি মিস করবেন তিনি।
এছাড়া এই মৌসুমে কয়েক ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা রোনাল্ড আরায়ুহোকেও তারা পাচ্ছে না এই ম্যাচে। জর্দি আলবা গত ম্যাচে তার পা যতো মোটা তার থেকেও বড় আইসপ্যাক পায়ের সাথে বেধে মাঠ ছেড়েছিলেন। তিনি আদৌ আজকের ম্যাচ শুরু থেকে খেলবেন কিনা সেটি দেখবার বিষয়। এছাড়াও মার্টিন ব্রাথওয়েট এবং উসমান ডেম্বেলে এই ম্যাচটি মিস করতে চলেছেন তাদের ইনজুরির কারণে।

বার্সেলোনার শক্তিঃ
বার্সেলোনার শক্তি কোনটি সেটি আসলে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এই মৌসুমে তাদের কোচ রোনাল্ড কোম্যান তাদের চিরচেনা শক্তি পসেশনাল ফুটবল থেকে সরে আসার একটু হলেও চেষ্টা করেছেন। কোম্যান তাদেরকে দিয়ে ক্রসিং ফুটবল খেলাতে চেয়েছেন কয়েকবার কিন্তু সেটি কাজে আসেনি। তাই আজ রাতে আমরা মোটামোটি আশা রাখতে পারি যে কোম্যান তাদের পুরনো শক্তিতেই ফেরত যাবেন।
তবে বার্সেলোনার চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন ফ্রেংকি ডি ইয়ং এবং সার্জিও বুস্কেটস। বুস্কেটস এখনো এই বয়সে এসেও দলের সবচেয়ে বেশি ৫৫৫ সঠিক পাস দিয়েছেন এই মৌসুমে। যদি মনে করেন এটি তেমন কিছু না সেক্ষেত্রে যদি তুলনা দেয়া হয় সেখানে তাদের দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সঠিক পাস খেলেছেন ফ্রেংকি ডি ইয়ং। ডি ইয়ং খেলেছেন সেখানে মাত্র ৩৯৪ টি সঠিক পাস। আপনি হয়ত এবার ভাবতে পারেন যে বুস্কেটস শুধু ছোট ছোট পাস খেলেছে। কিন্তু তিনি দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ ইয়ার্ডের বেশি পাসও খেলেছেন। আর অবাক করার মতো হলেও এটি সত্যি যে সার্জিও বুস্কেটস বার্সেলোনার দলের অন্য খেলোয়াড়দের থেকে প্রায় ৩ হাজার মিটার বেশি মাঠ কভার করেছেন তার পাসিং এর মাধ্যমে। শুধু তাই নয়। তিনি এই বয়সে এসেও এই মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে সবচেয়ে বেশি ট্যাকেল জিতেছেন। এই বয়সেও তিনি বার্সেলোনার মিডিল থার্ডে সবচেয়ে বেশি টাচ পাওয়া খেলোয়াড়। তাই বার্সেলোনার বিল্ডাপ নষ্ট করার জন্য বুস্কেটসকে যেভাবেই হোক প্রেস/মার্ক করতে হবে আমাদের এবং সেই দায়িত্ব খুব সম্ভবত বেনজেমার উপরেই থাকবে।
যদি ভেবে থাকেন শুধু আনসু ফাতির গতি আর মেমফিসকে দমালেই আমরা জিতবো তাহলে সেটা অনেকটাই দিবাস্বপ্নের মতো।

বার্সেলোনার দুর্বলতাঃ
কোম্যানের এই দলের একটি দুর্বলতা লক্ষণীয় এবং সেটি তাদের শুটিং। দলে একমাত্র মেমফিস ডিপাই বাদে কেউই ৪ টির বেশি শট অন টার্গেট নিতে পারেননি এখনও এই মৌসুমে। আর তাদের ডিফেন্সের অবস্থাও ঠিক উলটো। মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান এবার এই মৌসুমে ১৬ শট অন টার্গেট থেকে ৫ টি গোল হজম করেছেন। দলের শট অন টার্গেটে রাখতে পারার কম প্রবণতা এবং শট কনসিড করলেই সেটি প্রায় গোল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সত্যিই ভয়ের। এই কারণেই মূলত ক্যাম্প ন্যু এবার তেমন ভোকাল নয়। কারণ তারা বার্সেলোনার থেকে বিপদজনক শট দেখতে দেখতে অভ্যস্ত কিন্তু এই দল তাদের সেটি দিতে পারছে না এবং পুরনো সেই ডিফেন্সের সমস্যা মিলিয়ে তারা প্রথমে গোল খেলেই মোটামোটি একটা স্নায়ুচাপে ভোগা আবহাওয়ার অবস্থা তৈরি হচ্ছে এবার ক্যাম্প ন্যু তে। কারণ তাদের কে স্কোর করে ম্যাচ জেতাবে এই ব্যাপারে তারা এখনো নিশ্চিত নয়।

বার্সেলোনা এক মেসি ছাড়া এখনো সেই একই দল রয়েছে এবং যথেষ্ট ট্যালেন্ট রয়েছে। এখন এল ক্লাসিকো জেতাটাই তাদের দিতে পারে সেই দরকারি আত্মবিশ্বাসটা।

Cover image from AS.com

 

You May Also Like