কেমন হতে পারে কোপা আমেরিকা ফাইনালের ট্যাক্টিক্স?

ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ম্যাচের উত্তাপ এই বঙ্গদেশে যুগ-যুগ ধরেই ছড়িয়ে আছে। উত্তাপের ধরণ বদলে গেছে হয়ত। চায়ের আড্ডার চেয়ে সামাজিক মাধ্যমেই উত্তাপটাই এখন বেশি। এরমধ্যে এক পশলা মারামারি হয়ে গেছে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেই খবর আবার আর্জেন্টিনার জাতীয় পত্রিকা থেকে শুরু করে স্পেনের ক্রীড়া দৈনিক মার্কাও ছেপে ফেলেছে! মাঠের বাইরে যেমন উত্তাপ, মাঠের ভিতরেও উত্তাপ ছড়ানোর যথেষ্ট রসদ আছে দুই দলের মধ্যকার ১০৮ তম ম্যাচটিতে। আমার বর্তমান আগ্রহ অবশ্য শুধু এবং শুধুমাত্র মাঠের ভিতরের উত্তাপের দিকেই।

ব্রাজিল

ব্রাজিল পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলেছে বলা যায়। আর্জেন্টিনা ব্যতিত দক্ষিণ আমেরিকার সবগুলো দলই মানের দিক থেকে ব্রাজিলের কাছ থেকে যোজন-যোজন পিছিয়ে। ব্রাজিলের তারকাসমৃদ্ধ দলের বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রেসিং ফুটবল খেলারও সাহস করেনি কেউই। তাই ফ্রেড আর কাসেমিরো ডাবল পিভটে বল ডিস্ট্রিবিউট করে গিয়েছেন অনায়াসে। এর মধ্যে ফ্রেডকে মাঝে মধ্যে বেশ উপরে উঠেও খেলতে দেখা যায়। গত দুই ম্যাচে লুকাস পাকেতার অন্তর্ভুক্তি নেইমারকে কিছুটা হলেও নির্ভার করেছে।

সম্ভ্যাব্য একাদশঃ এডারসন, দানিলো, সিলভা, মার্কুইনহস, লোদি, ফ্রেড, কাসেমিরো, পাকেতা, নেইমার, রিচার্লিসন, এভারটন। 

আক্রমণে ব্রাজিল প্রতিপক্ষের হাফে বল রেখে খেলতে চায়। দুই ফুল-ব্যাক, উইঙ্গারদের পাসিং আউটলেট হিসেবে সব সময়েই প্রস্তুত থাকেন। নেইমারের কাজ মূলত বল ক্যারি করা এবং লাইন ব্রেক করা। নিজে একজন দক্ষ ফিনিশার হলেও ব্রাজিল দলে নেইমারের প্লেমেকিং দক্ষতার ছাপটাই রাখতে হয় বেশি। তাকে কাবু করতে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স এমনিতেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সেখান থেকে সঠিক সতীর্থকে খুঁজে বের করে নিতে পারলেই নেইমারের কাজ শেষ।

রক্ষণে ব্রাজিল হাই-লাইন ধরে খেলতে পছন্দ করে। এতে বল রিকভারির সাথে সাথেই বাম প্রান্তে এগিয়ে থাকা প্লেয়ারদের দিকে বল ঠেলে দিয়ে কাউন্টার এটাকে যাওয়ার সুযোগ থাকে। কাউন্টার এটাক ছাড়াও ডিফেন্স, মিডফিল্ড এবং আক্রমণে ব্রাজিলের যথেষ্ট মানসম্পন্ন  খেলোয়াড় থাকায়, দীর্ঘসময় ধরে বল পায়ে রেখে খেলতে কোন সমস্যা হয় না।

আর্জেন্টিনা

শুরুতেই অকপটে স্বীকার করে নিতে হবে, খেলোয়াড়দের মানে পিছিয়ে না থাকলেও ট্যাক্টিক্সে আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের থেকে অনেক পিছিয়ে থেকে এই ম্যাচটি শুরু করবে। আর্জেন্টাইন দলেও তারকার অভাব নেই। এই দলেরও অনেকেই ইউরোপের বড় বড় ক্লাবের কাণ্ডারি। কিন্তু লিওনেল স্কালোনির সাদামাটা ট্যাক্টিক্স এখন পর্যন্ত এই দলটিকে নিজেদের পুরোপুরি মেলে ধরতে দেয়নি। অনেক সময়েই মেসির পায়ে বল দিয়ে বাকিদের দিশেহারা হয়ে থাকতে দেখা গেছে। আধুনিক ফুটবলে যে কয়েকটি প্রচলিত ট্যাক্টিক্সে খেলা হয়, তাঁর কোনটিই ঠিক আর্জেন্টিনার খেলায় আপনি স্বচ্ছভাবে পাবেন না।

স্কালোনির আর্জেন্টিনা খেলে ৪-৩-৩ ফর্মেশোনে। মেসি খেলেন ফ্রি রোলে। এই রোলে খেলা ছাড়া তাঁর উপায়ও নেই। নিয়মিত ট্যাক্টিক্সের অভাব ছাড়াও স্কালোনি ব্যর্থ হয়েছেন নিয়মিত একটি একাদশ নির্বাচন করতে। একদিন লেফট ব্যাকে আকুনা তো আরেকদিন টাগ্লিয়াফিকো, একদিন মাঝমাঠে পারেদেস তো আরেকদিন গিডো রদ্রিগেজ। এছাড়াও জঘন্য ফর্মে থাকা নিকো গঞ্জালেসকে খেলানোর বা ফর্মে থাকা পাপু গোমেজকে না খেলানোর কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

সম্ভ্যাব্য একাদশঃ এমি মার্টিনেজ, মলিনা, পেজেলা, ওটামেন্ডি, আকুনা, গিডো, লো সেলসো, ডি পল, নিকো, লাউটারো, মেসি।

প্রতিপক্ষের দুই লাইনের মাঝে মেসি সব সময়েই নিজেকে ভালো পজিশনে রাখার চেষ্টা করেন। নিকো গঞ্জালেস বাম প্রান্তে লাইনের কিনারায় থাকেন তবে লাউটারো মার্টিনেজকে অনেকটা সেন্ট্রাল ভূমিকা নিতে হয়। ডি পল সেন্ট্রাল মিডফিল্ড থেকে শুরু করে রাইট ব্যাককে কভার দেওয়া – এই সবই করার চেষ্টা করে থাকেন। তবে রাইট ব্যাকে কাছ থেকে আক্রমণে তেমন কিছুই পায় না আর্জেন্টিনা। মাঝ মাঠে লো সেলসো এবং মেসির বোঝাপড়াটা আবার আর্জেন্টিনার জন্য বেশ জরুরি। ব্রাজিলের নেইমারের মত মেসিরও লক্ষ্য থাকে নিজের দিকে ডিফেন্ডারদের টেনে দলের জন্য স্পেস ফাঁকা করা। এই স্পেস কাজে লাগানোর দায়িত্ব নিকো গঞ্জালেস বা লাউটারোর ঘাড়ে গিয়ে পড়লে অবশ্য আর্জেন্টিনা খুব কমই সাফল্য পায়। তবে তুরুপের তাস হয়ে. বেঞ্চ থেকে উঠে এসে আনহেল ডি মারিয়া বেশ কয়েকবার দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। রক্ষণে আর্জেন্টিনা বেশ প্যাসিভ। প্রেসিং হয় খুবই কম, তাও শুধুমাত্র ফাইনাল থার্ডে। কোপা আমেরিকার ১০টি দলের মধ্যে প্রেসিং সিকুয়েন্সের সংখ্যার দিক থেকে আর্জেন্টিনার অবস্থান সপ্তম।

 

Cover art materials were downloaded from the internet. Image rights belong to original owners only.

You May Also Like