আজকের এই দিনে, ২৩ বছর আগেঃ লা সেপ্টিমা

‘রিয়াল মাদ্রিদ’ নামটার সাথে কি ‘আন্ডারডগ’ শব্দটা কখনো শুনেছেন? তাও আবার চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনালে? যদি না শুনে থাকেন তাহলে সেটি জানার জন্য আজ থেকে ২৩ বছর আগে ফিরে যেতে হবে।

২০ মে, ১৯৯৮ সালে আজকের এই দিনে চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিপক্ষ ছিল জুভেন্টাস।
জুভেন্টাস শেষ চার মৌসুমে তাদের তৃতীয় সিরি আ শিরোপা জিতে ফাইনালে এসেছিলো। ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনালটি ছিল জুভেন্টাসের টানা তৃতীয় ফাইনাল। অপরদিকে রিয়াল মাদ্রিদ ছিল একেবারে তলানিতে। লা লীগায় মাত্র ৩ পয়েন্টের ব্যবধানে রিয়াল মাদ্রিদ চতুর্থ হয়েছিল সেবার। যদি আমরা ১৯৯৮ সালের লা লীগার শেষ ম্যাচটি না জিততাম তাহলে আমরা আরও তিনটি দলের সাথে সমান ৬০ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম হিসেবে শেষ করতাম লীগে। কোপা দেল রেতেও আমরা দ্বিতীয় বিভাগের দল আলাভেসের কাছে হেরে বাদ পরেছিলাম।
ফাইনালের আগে সবাই এটিই ভাবতে ব্যস্ত ছিল যে রিয়াল মাদ্রিদ ফাইনালে উঠেছিলো কিভাবে? জুভেন্টাসকে হারানো তো দূরে থাক সবাই ভাবছিলো, ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে জুভেন্টাস কয়টি গোল দেবে। জুভেন্টাসের তখন আলেহান্দ্রো দেল পিয়েরো, ইনজাগি, জিনেদিন জিদান, দিদিয়ের দেশম্প ফর্মের ভেলায় ভাসছিলেন আর রিয়াল মাদ্রিদ তখন ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকারময় এক যুগের দিকে ধাবিত হচ্ছিলো।

ফাইনালের আগে রিয়াল প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো সাঞ্জের ছেলে ফার্নান্দো সাঞ্জ একটি স্বপ্নতে দেখতে পান মিয়াটোভিচ গোল দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল। কিন্তু সমস্যা হইলো ফাইনালের আগে মিয়াটোভিচ ভুগছিলেন কাফ মাসেলের ইনজুরিতে এবং তার বাচ্চা হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে লড়ছিল। তাই মিয়াটোভিচের খেলারই কথা ছিল না অ্যামস্টারডামের সেই ফাইনালে।


ফাইনালের আগে শেষ ট্রেনিং সেশনে মিয়াটোভিচ বড় মোজা পরে পুরো ট্রেনিং করেন যাতে তার পায়ের স্ট্র্যাপ কোচ ইয়ুপ হাইঙ্কেস না দেখতে পান। মিয়াটভিচ সেদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠে নামেন এবং ৬৭ মিনিটে তার গোলে রিয়াল মাদ্রিদ ঘরে তুলেছিল তাদের সপ্তম ইউরোপিয়ান ট্রফিটা। আদর করে যেটিকে ডাকা হয় ‘লা সেপ্টিমা’। মজার ব্যাপার হচ্ছে মিয়াটোভিচ সেই মৌসুমে মাত্র সেই একটি গোলই করেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লীগে এবং সেটি ছিল ফাইনালে।

এই গোলের মাধ্যমে পূর্ণতা পায় কাপ্তান সানচিজের ক্যারিয়ার। সানচিজ রিয়াল মাদ্রিদের বিখ্যাত লা কুইন্তা দেল বুয়েত্রের ৫ জনের একজন ছিলেন। বছরের পর বছর লা কুইন্তা দেল বুয়েত্রের হয়ে হন্যে হয়ে এই ট্রফিটি খুঁজেছিলেন তিনি। কিন্তু ট্রফিটা কখনোই ধরা দেয়নি লা কুইন্তা দেল বুয়েত্রের হাতে। ১৯৯৮ সালে সানচিজ যখন দলের কাপ্তান ছিলেন তখন তিনি ছিলেন লা কুইন্তা দেল বুয়েত্রের শেষ দাঁড়িয়ে থাকা যোদ্ধা। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৮ সালের সেই ফাইনাল জেতার পর সানচিজের হাতে এসে ধরা দেয় ট্রফিটা। পূর্ণতা পায় সানচিজের ক্যারিয়ার। সানচিজ জেতার ৩২ বছর আগে রিয়াল মাদ্রিদকে ট্রফিটা এনে দিয়েছিলেন তারই বাবা রিয়াল মাদ্রিদের আরেক লেজেন্ড ম্যানুয়েল সানচিজ।

রিয়াল মাদ্রিদের সেই জয় আমাদের ক্লাবের ইতিহাসে অনেকবড় একটি প্রভাব ফেলে গিয়েছিলো। সেই জয়টিই আমাদের পরবর্তী গ্যালাক্টিকো যুগ এবং বর্তমান রিয়াল মাদ্রিদকে তৈরি করে দিয়েছিলো। লা দেসিমার জন্য প্রায় ১২ বছরের অপেক্ষা করতেই মাদ্রিদিস্তাদের মনে উথাল পাতাল শুরু হয়ে গিয়েছিলো। তাহলে ভাবুন সেই জয়ের আগে আমরা ৩২ বছর চ্যাম্পিয়নস লীগ ট্রফিটি তুলে ধরিনি। মাঝে চলে গিয়েছে লা কুইন্তা দেল বুয়েন্ত্রে এবং অনেকগুলো ফাইনাল,সেমি ফাইনালের হৃদয়ভাঙা গল্প।

সেদিন সেই রাতে মিয়াটোভিচের গোলটি সমগ্র পৃথিবীতে নতুনভাবে রিয়াল মাদ্রিদকে চিনিয়ে দেয়। আন্ডারডগ হিসেবে হার না মানা মনোভাব রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের ট্রেডমার্ক বর্তমানে। হয়তো সেটি এসেছে আজ থেকে ২৩ বছর আগে তাদেরই উত্তরসূরি মিয়াটোভিচের কাছ থেকে যিনি তার নিজের সন্তানকে হাসপাতালে লড়াই করার মুহূর্তে তার জন্য ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন এবং গোল করে ট্রফিটি জিতে তার সন্তানকে উৎসর্গ করেছিলেন।

২৩ বছর আগের সেই রূপকথাটি আজীবন বেচে থাকবে যতদিন রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবটি এবং হাজারো মাদ্রিদিস্তা বেঁচে থাকবে তাদের মনে।

Cover image from realmadrid.com

You May Also Like